বাংলা সহায়ক

বুদ্ধি|Intelligence |Critical Perspective of the Construct of Intelligence and Multi-dimensional Intelligence বুদ্ধির ক্ষেত্রে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধির বিভিন্ন দিক


Critical Perspective of the Construct of Intelligence and Multi-dimensional Intelligence 

বুদ্ধির ক্ষেত্রে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধির বিভিন্ন দিক


বুদ্ধি : বুদ্ধি মানুষের জন্মগত মানসিক ক্ষমতা আভিধানিক অর্থে বুদ্ধি হল  জ্ঞান ,দক্ষতা অর্জন এবং প্রয়োগ করার ক্ষমতা (The ability to acquire and apply knowledge and skills.)

 

বুদ্ধিমত্তা  (Intelligence ) intelligentsia শব্দ থেকে এসেছে , যার অর্থ বোঝা (to understand)

 

বুদ্ধির সংজ্ঞা : 

বুদ্ধির সংজ্ঞা কী হবে তা নিয়ে মনোবিদগণের মধ্যে বিশেষ মতবিরোধ আছে বিভিন্ন মনোবিদ বুদ্ধির সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে নিরূপণ করেছেনবিভিন্ন মনোবিদগণের দেওয়া সংজ্ঞাগুলিকে সাধারণভাবে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারেযেমন-

এক- জৈবিক সংজ্ঞা (Biological definition)

দুই- শিক্ষামূলক সংজ্ঞা (Educational definition)

তিন- মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্তসংজ্ঞা (Faculty definition)

চার-পরীক্ষানির্ভর সংজ্ঞা (Empirical definition)

 

এক- জৈবিক সংজ্ঞা :

যেসব সংজ্ঞাগুলির মধ্যে মানুষের অভিযোজনের(adjustment) উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয় তাদেরই জৈবিক  সংজ্ঞার শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে

মনোবিদ স্টার্ন (Stern) : জীবনের নতুন সমস্যা বা পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন করার সাধারণ মানসিক ক্ষমতাই হল বুদ্ধি । ( It is general mental adaptability to new problems and condition of life)

 

এডওয়ার্ডস (Eweards) : পরিবর্তনশীল বহুমুখী প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতাই হল বুদ্ধি। (Capacity for variability and versatility of response)

 

দুই- শিক্ষামূলক সংজ্ঞা :

শিক্ষামূলক সংজ্ঞাগুলিতে মানুষের শিখন ক্ষমতার (Learning capacity) উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে

মনোবিদ বাকিংহাম (Buckingham): শিখনের ক্ষমতাই হল বুদ্ধি। (Intelligence is the ability to learn)

 

মনোবিদ ডিয়ারবোর্ন (Dearborn): শিখন ক্ষমতা বা অভিজ্ঞতাভিত্তিক আচরণ অর্জনের সুবিধা গ্রহণের ক্ষমতা হল বুদ্ধি। (Intelligence is the capacity to learn or profit by experience )

 

তিন- মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত সংজ্ঞা:

মনোবিদ বিঁনে (Binet) : বুদ্ধি বলতে মানুষের কতগুলি ক্ষমতার সমবায়কে বোঝায়এই ক্ষমতাগুলি হল

. বোধগম্যতার সম্পূর্ণতা      

. আবিষ্কারের ক্ষমতা 

. কোনো কাজে একাগ্রতা      

. বিচার করার ক্ষমতা

 

মনোবিদ টারম্যান (Terman): বুদ্ধি হল বিমূর্ত চিন্তা করার ক্ষমতা।(Ability to carry abstract thinking)

 

চার-পরীক্ষানির্ভর সংজ্ঞা :

পরীক্ষানির্ভর সংজ্ঞাগুলিতে বুদ্ধির কার্যকারিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে

মনোবিদ থর্নডাইক (Thorndike) : বুদ্ধিকে আদর্শ প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা হিসাবে বিবেচনা করেছেন

 

মনোবিদ পিঁরো (Pieron) : বুদ্ধি হল মূল্য নিরূপিত আচরণ

 

বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য :

বুদ্ধি হল মৌলিক মানসিক ক্ষমতা

বুদ্ধি সহজাত ক্ষমতা, তবে একে কার্যকরী করতে অনুশীলনের প্রয়োজন

লিঙ্গভেদে বুদ্ধির বিশেষ কোনো পার্থক্য হয় না

 

বুদ্ধির প্রকৃতি :

⏩ বুদ্ধি এক ধরনের মানসিক ক্ষমতা।

⏩ বুদ্ধির অর্থ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন শিখনের ক্ষমতা, অভিযোজনের ক্ষমতা, নতুন সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ইত্যাদি।

⏩ বুদ্ধির উপর জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশ উভয়ের প্রভাব রয়েছে। 

⏩ বুদ্ধি শিশুকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধানে সহায়তা করে।

⏩ বুদ্ধির মাধ্যমে শিশুরা বিমূর্ত চিন্তন করতে সক্ষম হয়।

⏩ বুদ্ধির মাধ্যমে শিশু জটিল পরিবেশের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়। 

⏩ বুদ্ধি বিভিন্ন প্রকার মানসিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

⏩ বুদ্ধি সৃজনশীলতা বিকাশের সহায়ক।

⏩ বুদ্ধি শিশুর ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

⏩ বুদ্ধি শিখন সঞ্চালনে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে।


বুদ্ধির কাজ :

বুদ্ধি এমন একটি মানসিক শক্তি যা আমাদের সাহায্য করে

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে

নতুন পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিবিধান করতে

বস্তুর মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয় করতে

কোনো সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি থেকে শিক্ষা নিতে

 

বুদ্ধির শ্রেণিবিভাগ :

মূর্ত বুদ্ধি (Concrete Intelligence) :

হাতে কলমে কাজ করার ক্ষেত্রে যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় তাকে মূর্ত বুদ্ধি বলে

বিমূর্ত বুদ্ধি (Abstract Intelligence) :

ভাষার ব্যবহার ,সংখ্যার ব্যবহার, চিন্তা, কল্পনা ,যুক্তি নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে বুদ্ধির প্রয়োজন তাকে বলা হয় বিমূর্ত বুদ্ধি

সামাজিক বুদ্ধি (Social Intelligence) :

দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক পরিবেশে সার্থক প্রতিক্রিয়া করতে যে বুদ্ধির প্রয়োজন তাকে সামাজিক বুদ্ধি বলে

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি (Emotional Intelligence) :

প্রাক্ষোভিক অভিযোজনের ক্ষেত্রে যে বুদ্ধির প্রয়োজন তাকে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি বলে

 

মনোবিদ ক্যাটেল (R B Cattell)-এর মতে বুদ্ধি ২ টি।     

তরল বুদ্ধি ও কেলাসিত বুদ্ধি

মনোবিদ হেব্ (D.O.Hebb) – এর মতেও বুদ্ধি দু'ধরণের।      

 ‘A’ বুদ্ধি ও ‘B’ বুদ্ধি

ক্যাটেল-এর তরল বুদ্ধি ও হেব্ -এর A বুদ্ধি একই শ্রেণিভুক্ত এবং কেলাসিত বুদ্ধি ও B বুদ্ধি একই শ্রেণির

‘A’ বুদ্ধি বা তরল বুদ্ধি ব্যক্তির সহজাত ক্ষমতা যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুকেন্দ্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

‘B’ বুদ্ধি বা কেলাসিত বুদ্ধি প্রধানত অভিজ্ঞতার ফলশিখন এবং পরিবেশগত উপাদান দ্বারা প্রভাবিত

 

বুদ্ধির তত্ত্ব :  

উপাদানমূলক তত্ত্ব (Components Theories) 

          ও 

জ্ঞানমূলক তত্ত্ব (Cognitive Theories)

উপাদানমূলক তত্ত্ব :

      মনোবিদ

        তত্ত্ব

স্টার্ন

একক উপাদান তত্ত্ব

Unifactor Theory

স্পিয়ারম্যান

দ্বি উপাদান তত্ত্ব

Two-factor Theory

থর্নডাইক

বহু উপাদান তত্ত্ব

Multiple factor Theory

থার্সস্টোন

প্রাথমিক মানসিক তত্ত্ব

Primary Mental Ability Theory

থম্পসন

বাছাই তত্ত্ব

Sampling Theory

গিলফোর্ড

ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব

Tri-Dimensional Theory

বার্ট ও ভেরনন

উচ্চ-ক্রমপর্যায়ভিত্তিক তত্ত্ব

Hieranchy Theory

জ্ঞানমূলক তত্ত্ব :

   মনোবিদ

    তত্ত্ব

ক্যাটেল ও হর্ন

বুদ্ধির তত্ত্ব

Theory of Intelligence

স্টার্নবার্গ

তথ্যপ্রক্রিয়াকরণ তত্ত্ব

Theory of information of Intelligence

গার্ডনার

বহুমুখী বুদ্ধি তত্ত্ব

Multiple Intelligences


বুদ্ধির‌ অভীক্ষা :

বুদ্ধিকে পরিমাপ করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে বলা হয় বুদ্ধির অভীক্ষা (Intelligence Test)

🎯 ফ্রান্সিস গ্যালটন প্রথম বুদ্ধিনিয়ে কাজ করেনতিনি বুদ্ধির ক্ষেত্রে বংশগতির উপর জোর দেন

🎯 গ্যালটনকে  ‘Father of Eugenics’ বলা হয়

🎯 ফরাসি মনোবিদ আলফ্রেড বিঁনে এবং তার সহকর্মী ডাক্তার সাইমন বুদ্ধি পরিমাপের বিজ্ঞানসম্মত অভীক্ষা প্রকাশ করেন

🎯 1905 সালে বিঁনে ও সাইমন বুদ্ধির অভীক্ষার উপর কাজ করেনএই স্কেল বিঁনে সাইমন স্কেল নামে পরিচিত

🎯 1908 সালে বিঁনে ও সাইমন এই অভীক্ষার সংস্কার করে নতুন নামকরণ করেন Development of Intelligence in children.

🎯 আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টারম্যান 1916 খ্রিস্টাব্দে বিঁনে-সাইমন অভীক্ষার এক আমেরিকান সংস্কার প্রচার করেন একে বলা হয় স্ট্যান্ডফোর্ড সংস্করণ বা স্ট্যানফোর্ড-বিঁনে অভীক্ষা

🎯 1937 সালে টারম্যান, মেরিল -এর সহযোগিতায় এই অভীক্ষার আর  একটি সংস্করণ প্রকাশ করেনএই অভীক্ষাকে তাঁদের দুজনের নাম অনুসারে টারম্যান-মেইল সংস্করণ বলা হয়ে থাকে


বুদ্ধ্যঙ্ক (Intelligence Quotient) :

বুদ্ধ্যঙ্ক বলতে সাধারণ বয়স এবং মানসিক বয়সের অনুপাতকে বোঝায়তবে সুবিধার জন্য এই অনুপাতকে ১০০ দিয়ে গুণ করা হয়

I.Q = Mental Age (M.A)/ Chronological Age(C.A) ×100

🎯 মনোবিদ উইলিয়াম স্টার্ন প্রথম বুদ্ধ্যঙ্কের ধারণার প্রবর্তন করেন

🎯 1916 সালে টারম্যান প্রথম মানসিক বৃদ্ধির বা বুদ্ধির সংখ্যামান নির্ণয় করার জন্য বুদ্ধ্যঙ্ক প্রয়োগ করে


বুদ্ধির বন্টন :




 PDF ডাউনলোড করতে নীচে ক্লিক করুন 👇👇

ডাউনলোড



শিশুর বিকাশ- ধারনা ও নীতিসমূহ


বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব


সামাজিকীকরণ


পিয়াজেঁর জ্ঞানমূলক বিকাশ তত্ত্ব


কোহলবার্গ


ভাইগটস্কি


শিশুকেন্দ্রিক ও প্রগতিমূলক শিক্ষা



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ