Influence of Heredity and Environment
বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
বংশগতি (Heredity):
মানুষ জন্মের
সময় পূর্বপুরুষদের যেসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে তার সমবায়কে সেই ব্যক্তির বংশগতি
বলা হয়।
●বংশগতির ধারক ও বাহক – জিন।
● জিনতত্ত্বের
জনক – মেন্ডেল।
□ বংশগতিকে অনেকে দু'ভাগে ভাগ করে থাকেন- জৈবিক বংশগতি ও মানসিক বংশগতি।
জৈবিক বংশগতি :
যেসব
দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলি শিশু তার পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে পায় তার সমবায়কে বোঝায় । জৈবিক বা দেহগত বংশগতি
ওজন,
উচ্চতা,শরীরের
গঠন,
চোখের রং,
চুলের রং, প্রভৃতির উপর নির্ভর
করে ।
মানসিক বংশগতি :
মানসিক
বংশগতি বলতে বোঝায় শিশুর সেইসব মানসিক
বৈশিষ্ট্য,
ক্ষমতা এবং প্রবণতার সমন্বয় যা জন্ম মুহূর্তে তার
মধ্যে থাকে। মানসিক বংশগতি প্রবৃত্তি, প্রক্ষোভ,বুদ্ধি বিশেষ
ক্ষেত্রে দক্ষতা ইত্যাদির উপর নির্ভর
করে।
প্রতক্ষ বংশগতি :
শিশু
তার বাবা-মার কাছ থেকে যে গুণগুলি পায়
তাকে প্রত্যক্ষ বংশগতি বলে।
পরোক্ষ বংশগতি :
বাবা
মা ছাড়া অন্যান্য পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যা
পায় তাকে পরোক্ষ বংশগতি বলে।
□ স্যার ফ্রান্সিস গ্যাল্টন তাঁর Law of ancestral
inheritance-এ উল্লেখ
করেছেন –
■কোনো
শিশু তার বৈশিষ্ট্যের অর্ধেক অংশ(১/২) পায়
পিতামাতার কাছ থেকে।
■এক-চতুর্থাংশ
(১/৪) পায় দাদু-দিদিমা শ্রেণির
পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে।
■এক অষ্টমাংশ(১/৮) পায় তার পূর্ববর্তী বংশধরদের কাছ
থেকে।
বংশগতির সূত্র
প্রাথমিক নিয়ম : প্রত্যেক
প্রাণীই তার নিজের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাণিরই জন্মদানে সক্ষম।
দ্বিতীয় নিয়ম : পার্থক্যের
সূত্র।
তৃতীয় নিয়ম: Law of final regression [প্রত্যেক
মানুষের প্রবণতা গড়ের দিকে
যাওয়া]
চতুর্থ নিয়ম : অর্জিত
বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমিক সঞ্চালন হয়।
মানসিক বৈশিষ্ট্য ও বংশগতি
অনেক মনোবিদ্ আছেন যাঁরা মানসিক
বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বংশগতির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ
করেছেন তাদের বলা হয় বংশগতিবাদী ।
এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গ্যাল্টন, কার্ল পিয়ারসন, ডাগডেল, গডার্ড , টারম্যান
।
বংশগতিবাদীদের সমীক্ষা :
গ্যাল্টনের সমীক্ষা :
গ্যাল্টন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর Hereditary
Genius - বইয়ে
৯৭৭ জন বিখ্যাত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের জীবন পর্যালোচনা
করে দেখেন।
এদের মধ্যে ৫৩৬ জন কোনও না কোনও ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
গডার্ড-এর সমীক্ষা :
১৯১৪ সালে গডার্ড কালিকক পরিবারের উপর সমীক্ষা করেন।
ডাগডেল-এর সমীক্ষা :
ডাগডেল জিউক নামে এক কয়েদির পাঁচ পুরুষের কুলপঞ্জি পরীক্ষা করে দেখেন যে তাঁর বংশের বেশিরভাগ মানুষ জেলখানার কয়েদি, খুন,চোর ইত্যাদি।
টারম্যান-এর সমীক্ষা :
টারম্যান
১০০০ ছেলে-মেয়ের বুদ্ধির পরিমাপ করেন।
পরিবেশ (Environment)
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে
যেসব উদ্দীপক উত্তেজিত করে তার সমবায়ই হল পরিবেশ।
পরিবেশ বলতে ব্যক্তির জীবনের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন উপাদানকে বোঝায় যেমন- সংস্কৃতি , অর্থনীতি, বৌদ্ধিক, নৈতিক, প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, উপাদানকে।
পরিবেশের উপাদানের উৎসগুলি
পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুগোষ্ঠী, বিদ্যালয় প্রভৃতি থেকে আসে।
মনোবিদগণ পরিবেশকে
দুইভাগে ভাগ করেন। যেমন-
প্রাক্ ভূমিষ্ঠ
পরিবেশ ও উত্তর ভূমিষ্ঠ
পরিবেশ ।
প্রাক্ ভূমিষ্ঠ পরিবেশ :
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উত্তেজনা ভ্রূণকে প্রভাবিত করে। মায়ের আঘাত লাগলে, মা খুব জোরালো ওষুধ খেলে , বা মায়ের কোনো অসুখ করলে শিশুকে তা নানাভাবে প্রভাবিত করে। এই ধরনের প্রভাবকে প্রাক্ ভূমিষ্ঠ পরিবেশ বলে।
উত্তর ভূমিষ্ঠ পরিবেশ:
ভূমিষ্ঠ
হওয়ার পর যেসব প্রাকৃতিক শক্তি ব্যক্তিজীবনে
মৃত্যু পর্যন্ত সক্রিয় থাকে তাকে উত্তর ভূমিষ্ঠ
পরিবেশ বলে। যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিদ্যালয়
পরিবেশ,
সামাজিক পরিবেশ,
পারিবারিক পরিবেশ,
কর্ম পরিবেশ ইত্যাদি।
মানসিক বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশ
বহু মনোবিদ আছেন যাঁরা বংশগতির গুরুত্বকে একেবারে
স্বীকার করেন না তাদের ধারণা ব্যক্তিজীবনের বিকাশ তাদের
পরিবেশের দ্বারা নির্ধারিত হয়। এঁদের পরিবেশবাদী
বলা হয়।
পরিবেশবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ওয়াটসন, জন লক, ক্যাটেল, ইস্টারব্রুক, বারবারা বার্কস প্রমুখ।
মনোবিদ ওয়াটসন বলেছেন – “আমাকে একজন
সুস্থ স্বাভাবিক শিশু
দিন আমি ইচ্ছামতো যেকোনো দিকে তাদের বিকাশ
নিয়ন্ত্রণ করে পরিপূর্ণতা এনে দিতে
পারি।“
ইস্টারব্রুক , ক্যাটেল, বারবারা বার্কস প্রমুখ বংশগতিবাদীদের সমীক্ষার বিরোধিতা করে বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।
আধুনিক ধারণা :
□ আধুনিক মনোবিদরা স্বীকার করেছেন-ব্যক্তিজীবনের
বিকাশ বংশগতি এবং পরিবেশ এই দুই উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়ার দ্বারাই নির্ধারিত
হয়।
মনোবিদ আলপোর্ট-এর মতে – Personality = Heredity ×Environment
শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশ
১। বংশগতি অনুশীলন (মানসিক অভীক্ষা) ২। বিদ্যালয় পরিবেশ (শিক্ষা উপযোগী পরিবেশ, গ্রন্থাগার) ৩। পারস্পরিক সম্পর্ক (শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ সম্পর্ক) ৪। অবসরযাপনের শিক্ষা ৫। স্বাধীনতা ৬। নির্দেশনা
পরিশেষে বলা যায়, বংশগতি শিক্ষার্থীদের জীবন বিকাশের প্রারম্ভিক
পরিচয় মাত্র আর পরিবেশ তার বিকাশের গতি নির্ণায়ক।
পিয়াজেঁর জ্ঞানমূলক বিকাশ তত্ত্ব
0 মন্তব্যসমূহ