ভূমিকা
প্রশ্ন : গারো পাহাড়ের নীচে যারা বসবাস করে তাদের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও।
উত্তর : পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় কী অসাধারণ গদ্য লিখতেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ হল ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থটি । এ গ্রন্থের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ‘গারো পাহাড়ের নীচে’। আলোচ্য গদ্যে গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী মানুষদের জীবনযাত্রার পরিচয় পাই। হাজং-গারো- মর্গান প্রভৃতি নানা জাতের মানুষ সেখানে বসবাস করে। তারা একে অপরে ভিন্ন জাতি হলেও তাদের জীবনযাত্রা প্রায় একই রকমের । গারোদের ভাষা আলাদা কিন্তু হাজং-ডালুদের ভাষা বাংলা। তবে আমাদের ভাষার সঙ্গে উচ্চারণ পার্থক্য রয়েছে। গারোদের বসতবাড়িগুলির বিশেষত্ব রয়েছে। তাদের ঘরগুলি মাচার উপর। বন্যজন্তুর ভয়ে মানুষ গবাদিপশু সবাই এক মাচার থাকে মাচায় থাকে, সেখানেই রান্নাবান্না করে। এদের সকলের প্রধান জীবিকা চাষবাস। হালবলদ নিয়ে তারা চাষ করে । তবে হাজংরাই চাষের ব্যাপারে সবচেয়ে দক্ষ। এই অঞ্চলে তারা নাকি প্রথম এসেছিল । চাষবাসে তাদের জুড়ি মেলা ভার। তাই পাহাড়ি গারোরা এদের নাম দিয়েছে ‘হাজং’ অর্থাৎ চাষের পোকা । ছোটখাটো কোন টিলায় উঠে নিচের দিকে তাকালে মনে হবে পৃথিবী যেন সবুজ। যতদূর চোখ যায়
শুধু ধান আর ধান।
এত ফসল আর এত প্রাচুর্য থাকা সত্বেও এইসব মানুষদের জীবনে সুখ নেই । ধান কাটার সময় মেয়ে-পুরুষ, ছেলে- বুড়ো সবাই কাস্তে নিয়ে মাঠে যায়। সকলে মিলে মনের আনন্দে মাঠের ধান ঘরে নিয়ে আসে । আর তার পরেই আসে জমিদারদের পাইক বরকন্দাজ । জমিদারের পাওনা মিটিয়ে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে সারা বছর খাওয়া চলে না। তারা মনের দুঃখে গান ধরে – “খালি পেটে লেগেছে ধাঁধা।
২) “কিন্তু হাতিবেগার প্রথা আর চলল না । “- হাতিবেগার প্রথার পরিচয় দাও। কার নেতৃত্বে কীভাবে হাতিবেগার প্রথা বন্ধ হয়েছিল ? ৩+২
অথবা, “মানুষ কত দিন এসব সহ্য করতে পারে ? তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। “
— কী সহ্য না করার কথা বলা হয়েছে? বিদ্রোহের ফল কী হয়েছিল ? ৩+২
উত্তর : পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় কী অসাধারণ লিখতেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ হল ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থটি । প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত অংশটি ‘গারো পাহাড়ের নীচে’ গদ্যাংশ থেকে হয়েছে। লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী মানুষদের খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন । আর এই জন্য এই সমস্ত অঞ্চলের মানুষদের বিদ্রোহী হওয়ার কারণ জানতে পেরেছিলেন। লেখক জানিয়েছেন ৫০-৬০ বছর আগে এ অঞ্চলে জমিদারের একটা আইন ছিল তাকে বলা হত হাতিবেগার। নিজের শখ মেটাতে জমিদার হাতি শিকার করতে বার হতেন। প্রজাদের নিজের নিজের চাল-চিঁড়ে বেঁধে আসতে হতো জঙ্গল বেড় দিয়ে হাতিকে ঘিরে ধরার জন্য। জমিদার নিরাপদে বসে থাকলেও প্রায়ই বিপদের মুখে পড়ে প্রাণ হারাতে হতো সাধারণ প্রজাদের। লেখক বলেছেন – “যারা হাতি বেড় দিতে যেত তাদের কাউকে সাপের মুখে কাউকে বাঘের মুখে প্রাণ দিতে হতো । ” আলোচ্য গদ্যাংশে জমিদারের শখ মেটানোর জন্য মানুষের উপর করা এই অন্যায় অত্যাচার সহ্য না করার কথা এখানে বলা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এই প্রথা সহ্য করতে করতে একসময় স্বাভাবিকভাবেই প্রজার দল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রজারা গোরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। গ্রামে গ্রামে চাকলায় চাকলায় মিটিং করে তারা একত্রিত হলো । কামারশালায় তৈরি করা হলো অস্ত্রশস্ত্র । তবে শেষ পর্যন্ত জমিদারের পল্টনের হাতে প্রজাদের হার হল । কিন্তু হাতি বেগার প্রথার অবসান ঘটলো। তাই পরোক্ষভাবে প্রজাদেরই জয় হয়েছিল।
অথবা,
“মনমোহনের কথায় চেংমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ।” — মনমোহনের কোন কথায় চেংমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে? আকাশ ভেঙে পড়ার বিষয়টি চেংমান কীভাবে বুঝেছিল ?
উত্তর : পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘ছাতির বদলে হাতি ‘ রচনা থেকে আলোচনআলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে । মহাজন মনমোহন চেংমানকে বলেছিলেন – পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছ যে বাছাধন পাওনা মিটিয়ে দিয়ে দাও – এই কথায় চেংমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মনমোহন একদিন এক বৃষ্টির দিনে চেংমানকে ছাতা দিয়ে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করেছিল । কিন্তু সেই সাহায্যের পরিণতি যে এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে স্বপ্নেও ভাবেনি । সে প্রথমে বেশ কয়েকবার ছাতা ফেরত দিতে চাইলে মনমোহন ছাতা ফেরত না নিয়ে বরং তার প্রতি এমন ব্যবহার করে যে মনে হয় তার মতো ভালো মানুষ জগতে আর একটিও হয়না । কিন্তু যেদিন ছাতা না নিয়ে চেংমান বন্দরে এসেছিল সেদিন মহাজন সুযোগ বুঝে চেংমানের মাথায় কোপ বসাল। “লাল খেরোয় বাঁধানো দাবা খাতা বার করে যা পাওনা হিসাব দেখাল, তাতে চেংমানের চোখ কপালে উঠলো। “
এই ক’বছরে চক্রবৃদ্ধিহারে ছাতার দাম হয়েছে একটা হাতির সমান। সুদসমেত পাওনা হয়েছে সর্বমোট হাজার খানেক টাকা, প্রায় একটা হাতির দাম । এই ঘটনায় চেংমান বুঝতে পারল- ‘এবার সে ইঁদুর কলে পড়েছে’। এই ঘটনায় চেংমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল।
৩। “এদিকে আর এক রকমের প্রথা আছে – নানকার প্রথা। ” – নানকার প্রথা কী? কীভাবে এই প্রথার অবসান ঘটেছিল?