বাংলা ছাত্রছাত্রীদের পাশে সারাক্ষণ

WBCSSC SLST বাংলা ইন্টারভিউ: গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর | নিশ্চিত সাফল্যের সেরা প্রস্তুতি! | SLST Bengali Interview

প্রথম পর্ব: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রাচীনযুগ: চর্যাপদ 

বাংলা শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপ হলো ইন্টারভিউ। এই ধাপে সফল হতে গেলে শুধু মুখস্থ জ্ঞান নয়, প্রয়োজন বিষয়টির গভীর ধারণা ও সহজভাবে যুক্তিসহকারে ব্যাখ্যা করার দক্ষতা।

এই পোস্টে আমরা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রাচীনযুগ: চর্যাপদ থেকে ইন্টারভিউ উপযোগী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তরগুলি তুলে ধরছি। এই প্রশ্নগুলি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। 

. প্রশ্ন : অবাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য নিদর্শনগুলিকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্তির কারণ কী?

উত্তর: বাঙালিরা সংস্কৃত প্রাকৃত অবহট্ট ভাষায় যেসব সাহিত্য রচনা করেছিলেন সেগুলিতে বাংলার সমাজ জীবন, প্রকৃতি, প্রেমভাবনা সর্বোপরি বাঙালির মানস সাহিত্যিক রূপ পেয়েছে এবং পরবর্তীকালের রাধাকৃষ্ণ লীলায়, রামকথা, মঙ্গলকাব্যের নানা অনুসঙ্গের পূর্বসূত্র এসব সাহিত্যে মেলে। এইসব কারণে এগুলিকে বাংলা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্তি করা হয়।

. প্রশ্ন: চর্যাপদের আগে বাঙালিরা কোন ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন ?

উত্তর: চর্যাপদের আগে বাঙালিরা সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অবহট্ট ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন।

. প্রশ্ন: চর্যাপদের পুথি নেপালে পাবার কারণ কী?

উত্তর: তুর্কি আক্রমণকারীদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল উচ্চবর্ণীয় ব্রাহ্মণ এবং হিন্দু- বৌদ্ধ মঠ-মন্দির পুথিপত্র। তাই সেই আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুথিপত্র নিয়ে পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাষ্ট্র নেপালে তারা পালিয়ে গিয়েছিল। এই কারণে চর্যার পুথি আবিষ্কৃত হয় নেপালে।

. প্রশ্ন: চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যাভাষা বলার কারণ কী?

উত্তর: চর্যাপদ গুলিতে পদকর্তারা যে ভাষা ব্যবহার করে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তা সর্বসাধারণের বোধগম্য নয়, তা সন্ধ্যার আলো-আঁধারের মতো রহস্যময় তাই একে সন্ধ্যাভাষা বলা হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন। সম্যক ধ্যানের মাধ্যমে এর অর্থ বুঝতে হয় তাই এর নাম সন্ধ্যাভাষা।

৫. প্রশ্ন : চর্যাপদের পদকর্তারা আলোআঁধারি ভাষায় গানগুলি লিখতেন কেন?

উত্তর: গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের লোকেরা সহজিয়াদের প্রতি প্রসন্ন ছিলেন না। তাই এই সমস্ত ব্রাহ্মণদের রক্তচক্ষু থেকে তাদের ধর্মাচরণকে রক্ষা করতেই বৌদ্ধসিদ্ধাচার্যেরা সন্ধ্যা ভাষার আশ্রয় নিতেন।

৬. প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্ব কোথায়?

উত্তর: ১. চর্যাপদ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম ও একমাত্র নিদর্শন।

২. চর্যাপদের তৎকালীন বাঙালিদের সমাজ ও জীবনচিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়।

৩. বাংলা পয়ার ছন্দের ও নানা অলংকারের আদি উৎস হল চর্যাপদ

৭. প্রশ্ন: নবচর্যাপদ কী?

উত্তর: ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ডঃ শশিভূষণ দাশগুপ্ত নেপালে ২০টি প্রাচীন পুথি থেকে ২৫০ টি চর্যাপদ পান। তার থেকে ৯৮টি পদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নবচর্যাপদ’ নামে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে শশিভূষণ দাশগুপ্তের মৃত্যু হলে ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় নবচর্যাপদ প্রকাশিত হয়।

৮. প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের যুগ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তর: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের যুগ বিভাগ করা এই জন্য প্রয়োজন যে, কোনো কবি সাহিত্যিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে যে তিনি কোন পর্বের ব্যক্তি। শুধু সাহিত্যিক সম্পর্কেই নয়, সমকালীন সমাজ জীবনের ইতিহাসের ধারাটি বুঝতে সুবিধা হয়।

৯. চর্যাপদের আদি কবি হিসেবে কাকে বিবেচনা করা হয়?

উত্তর: চর্যাপদের ১ নম্বর পদটি যেহেতু লুইপা রচনা করেছেন এবং সকল গবেষক তাকেই প্রথম পদকর্তা হিসেবে স্বীকার করেন, তাই লুইপাকেই চর্যাপদের আদি কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১০. চর্যাপদের পদগুলিতে সমাজ জীবনের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে?

উত্তর: চর্যাপদের পদগুলিতে তৎকালীন নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে, ডোম্বী, শবরী, চণ্ডাল, নিষাদী, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশাজীবী ও নিম্নশ্রেণীর নারীদের কথা এতে উঠে এসেছে।

১১. চর্যাপদ কে, কখন, এবং কোথা থেকে আবিষ্কার করেন?

উত্তর: চর্যাপদ আবিষ্কার করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তিনি ১৯০৭ সালে (বাংলা ১৩১৪ বঙ্গাব্দে) নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে এটি আবিষ্কার করেন।

১২. চর্যাপদ কত খ্রিস্টাব্দে কী নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়?

উত্তর: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১৩২৩ বঙ্গাব্দে) ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোঁহা’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

১৩. চর্যাপদের মোট পদসংখ্যা কত? চর্যাপদের কবি বা সিদ্ধাচার্যের সংখ্যা কতজন?

উত্তর: গবেষকদের মতে চর্যাপদে মোট পদ ছিল ৫১টি। তবে আবিষ্কারের সময় সাড়ে ৪৬টি পদ পাওয়া যায় (একটি পদের শেষাংশ ছেঁড়া ছিল)।

চর্যাপদের কবি বা সিদ্ধাচার্যের সংখ্যা ২৪ জন।

১৪. চর্যাপদের ধর্মমত কী?

উত্তর: চর্যাপদের ধর্মমত হলো বৌদ্ধ সহজযান বা বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্ম। এই ধর্মে জাতিভেদ প্রথাকে অস্বীকার করে এবং সহজ-সরল জীবনযাত্রার মাধ্যমে নির্বাণ লাভের পথ দেখানো হয়।

১৫. চর্যাপদের সাধনতন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে বলুন।

চর্যাপদের সাধনতন্ত্র বৌদ্ধ সহজযান দ্বারা প্রভাবিত। এর মূল কথা হলো দেহকে শ্রেষ্ঠ সাধনক্ষেত্র জ্ঞান করা। গুরু বা ‘শব্দ’ অনুসরণ করে দেহের ভেতরেই ‘মহাসুখ’ বা নির্বাণ লাভ করা।  ইড়া-পিঙ্গলা (গঙ্গা-যমুনা) ও সুষুম্না নাড়ি-কেন্দ্রিক যোগের মাধ্যমে দেহচক্র ভেদ করে শূন্যতা উপলব্ধি করা হয়।



চর্যাপদ থেকে আরো প্রশ্নোত্তর জানতে এখানে ক্লিক করুন
            

Scroll to Top