বাংলা সহায়ক

কোনি- মতি নন্দী|koni| কোনি প্রশ্নোত্তর| পর্ষদ -এর প্রশ্নোত্তর |


পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ :

কোনি - মতি নন্দী 


লেখক পরিচিত:

জন্ম :১৯৩১

মৃত্যু : ২০১০

আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের খ্যাতনামা লেখক। জন্ম উত্তর কলকাতায় ।খেলাধূলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল । ১৯৫৭ সালে 'দেশ' পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ সালে 'শারদীয় পরিচয়' পত্রিকায় প্রকাশিত  তাঁর গল্প 'বেহুলার ভেলা'  পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছিল। বাংলা 'ক্রীড়াসাহিত্য' তাঁর হাতেই প্রাণ পেয়েছে। নিজস্ব ভাষাভঙ্গি,তীব্র  বিদ্রূপ আর অবিস্মরণীয় শিল্প দৃষ্টি তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য । 


শিশু-কিশোরদের জন্য বহু জনপ্রিয় গ্রন্থ রচনা করেছেন । তার মধ্যে 'স্ট্রাইকার', 'স্টপার', 'ননীদা নট আউট', 'অপরাজিত আনন্দ', 'কলাবতী' প্রভৃতি সাহিত্য চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছে । 


১৯৭৪  সালের আনন্দ পুরস্কার, ১৯৯১ সালে 'সাদা খাম' উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। শিশু-কিশোর সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে বাংলা আকাডদমি পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর মতো সব্যসাচী লেখকের জুড়ি বিশ্বসাহিত্যে মেলা ভার।


উৎস:

মতি নন্দীর 'কোনি' উপন্যাসটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এই উপন্যাস প্রথম চলচ্চিত্রায়িত হয় ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করে ।


চরিত্র: 

ক্ষিতীশ, কোনি, লীলাবতী, বিষ্টুচরণ, হিয়া, প্রণবেন্দু, অমিয়া, হরিচরণ,কমল, বেলা, ধীরেন,বিনোদ প্রমুখ।




রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : পূর্ণমান-৫

১। কোনির পারিবারিক জীবনের

 পরিচয় দাও ।     (মাধ্যমিক-২০১৭)

উত্তর: বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসে প্রান্তিক পরিবারের সন্তান কোনির গঙ্গায় একজন মেঠো সাঁতারু থেকে ভারত সেরা সাঁতারু হয়ে ওঠার এক রোমাঞ্চকর কাহিনী বর্ণিত আছে ।

 

 🔵 কোনি ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যা । সুতরাং তার জীবনের সাথে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা জড়িয়ে ছিল ওতপ্রোতভাবে । বেদনায় বিধুর কোনির জীবনে দারিদ্র্যই হয়ে উঠেছিল তার জীবনের সঙ্গী । কবির কথায় — "হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান ।" কোনির দরিদ্র পরিবারে ছিল তার মা, তার দাদা কমল পাল, তার ছোট ভাই গোপাল এবং আরো দুই বোন । তার এক দাদা মারা গিয়েছে ইলেকট্রিক তারে কাটা পড়ে, অপর এক দাদা থাকে পিসির বাড়ি, কাঁচড়াপাড়ায় । দারিদ্র্যক্লিষ্ট কোনির সংসারে একমাত্র 'bread-winner' ছিল কমল পাল, সে রাজাবাজারে মোটর গ্যারেজে কাজ করে । সামান্য আয়ে সংসার চলে । কোনির শৈশবের কুয়াশার আড়ালে বাবা হারিয়ে গেছে টি.বি. রোগে । কমলও আকস্মিকভাবে একই রোগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় । ফলে, কোনির পরিবার থেকে হারিয়ে যায় সুখের কলরোল । শ্যামপুকুর বস্তির চালার ঝুপড়ি ঘরে নেমে আসে বিষন্নতা । হতাশার বেনোজলে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে আসে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ ।

 

সাঁতারে আসার আগে, কোনি গঙ্গায় সাঁতার কেটে আম কুড়োত আর পয়সা উপার্জনের আশায় সেই আম বাজারে বেচতো । সামান্য ফ্যান ভাত, তেঁতুল, কাঁচা লঙ্কা আর কাঁচা পেঁয়াজ খেয়েই জীবন ধারণ করতো  । থাকতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছোট্ট একটা ঘরে । কিন্তু কমলের মৃত্যুর পর, কোনিদের অবস্থা আরো সঙ্গীন হয়ে পড়ে । ছোট ভাই পনেরো টাকা মাইনেতে চায়ের দোকানে কাজ করতে লেগে পড়ে । কোনি চল্লিশ টাকা মাইনেতে ক্ষিতিশের স্ত্রী লীলাবতীর টেলারিং শপ, 'প্রজাপতি' তে ফাইফরমাশ খাটতে থাকে আর কমলের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে যে সে ভারতসেরা সাঁতারু হয়ে উঠবে, কোনি কমল দীঘির জলে স্বপ্নের ঢেউ তোলে । ক্ষিতিশের বদান্যতায় কোনির পরিবার কমলের অনুপস্থিতিতে মুখে ভাতটুকু তুলতে পারে । দু-টাকার ডিম, কলা, টোস্টের জন্য লালায়িত কোনি ও তার যৌথ পরিবারকে ক্ষিতীশ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল । এভাবেই উপন্যাসে কোনির বেদনাদীর্ণ পারিবারিক জীবনের চালচিত্র ফুটে উঠেছিল ।

 

২।  ক্ষিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে

 প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল সে

 সম্পর্কে আলোচনা করো ।                                       (মাধ্যমিক-২০১৭)

 

উত্তর:- বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসে কোনির ক্ষিদ্দা ক্ষিতীশ সিংহ আগাগোড়া এক ব্যতিক্রমী মানুষ । সাধারণ এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে থেকে নিজের একগুঁয়েমি নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায়কে পাথেয় করে কোনির কাঙ্খিত উচ্চতায় উত্তরনের পিছনে যে মানুষটির অবদান অনস্বীকার্য তিনি হলেন কোনির ক্ষিদ্দা অর্থাৎ ক্ষিতীশ সিংহ ।

 

প্রতিভাকে চিনে নিয়ে তাকে সুশৃংখল প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে চালনা করতে যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন, তা ক্ষিতীশের ছিল । ক্ষিতীশ দেশের জন্য গৌরব এনে দেওয়া একজন খেলোয়াড় তৈরি করতে জলের মতো অর্থ ব্যয় করেছেন । কোনিকে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কেবল একজন সুযোগ্য খেলোয়াড় তৈরির জন্য । নিজে রোজগার বা অন্য কোন স্বার্থের জন্য নয় । নিজের সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনির খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের দায়িত্ব নিয়েছেন । কোনিকে অনিচ্ছাকৃত হলেও তাকে দিয়ে প্রবল পরিশ্রম করিয়েছেন । আবার বড় দাদার মতো তাকে চিড়িয়াখানায় কুমীর দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন । যে ক্ষিদ্দা কোনি কেঁদে ফেললেও প্র্যাকটিস থেকে রেহাই দেন নি । খাওয়ার টোপ দিয়ে সাঁতার কাটানোর মতো অমানবিক আচরণ করেছেন । তিনিই আবার কোনি ঘুমিয়ে পড়লে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন । ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে কোনি নিজেকে প্রমাণ করার পর তার মাথার উপর ঝরে পড়েছে তার আনন্দাশ্রু ।

 

৩। "জোচ্চুরি করে আমাকে বসিয়ে রেখে এখন ঠেকায় পড়ে এসেছ আমার কাছে" — কোনির এই অভিমানের কারণ কী ? এর পরবর্তী ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।       (মাধ্যমিক-২০১৭)

 

উত্তর:- সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসের প্রশ্নোদ্ধৃতাংশের বক্তা, কোনি যখন হিয়ার কাছ থেকে জানতে পারে, জাতীয় সাঁতারের শেষ ইভেন্টে ৪×১০০ মিটার রিলেরেসের চতুর্থ ব্যক্তি, অমিয়ার অসুস্থতা জনিত কারণবশতঃ কোনিকে জলে নামতে হবে তখন সে বেঁকে বসেছিল । কারণ সুদূর এই মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার কম্পিটিশনে কোনি প্রতিযোগী হয়ে আসা সত্বেও তাকে বিভিন্ন অজুহাতে বসিয়ে রাখা হয়, প্রতিযোগীদের লিস্টে কোনির নাম নেই, এই কারণে কোনি কোনো ইভেন্টে অংশ নিতে পারে না । শুধু তাই নয় কোনিকে 'চোর' অপবাদও সহ্য করতে হয়েছিল, চড়ও মারা হয়েছিল । এই দুর্ব্যবহারে ক্রুদ্ধ কোনি তাই বাংলার স্বার্থে আর প্রতিযোগিতায় নামতে চায়নি । তার অভিমান হয়েছিল ।

 

       🔵 কোনি হিয়ার অনুরোধে হিয়ারই দেওয়া অতিরিক্ত কস্টিউম পরে রিলে রেসে নামার জন্য রাজি হয়েছিল । এরপর মেয়েদের ৪০০ মিটার রিলে রেস শুরু হয় । প্রথমে বাংলার হয়ে জলে ঝাঁপ দেয় হিয়া মিত্র । সে সবার আগে বোর্ড স্পর্শ করে ফিরে এসে বাংলার পুষ্পিতাকে কিছুটা আগুয়ান থাকার সুবিধা দেয় । কিন্তু মহারাষ্ট্র এবার বাংলার থেকে এগিয়ে যায় । এরপর জলে নামে বাংলার বেলা । সে মহারাষ্ট্রের দীপ্তি কারমারকারের সাথে জোর প্রতিযোগিতা করেছিল । বেলার এই সাফল্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছিল কোনি । কোনির সাথে প্রতিযোগিতা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের নামী সাঁতারু রমা যোশীর । রমার জলে পড়ার তিন সেকেন্ড পরে কোনি জলে ঝাঁপ দেয় । জলে নামার পূর্ব মুহূর্তে সে দেখতে পায়, তার সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহকে । তাঁর মুখে উচ্চারিত হয়েই চলেছিল — "ফাইট কোনি ফাইট ।"

 

       দীর্ঘ অদর্শনের পর কোনি ক্ষিদ্দাকে দেখে মনে বল পায় । রমার পরে জলে নামলেও সে নিজেকে উজাড় করে দেয় । লেখক বলেছেন — জলের বদলে মাটি থাকলে বলা যেত একটা কালো প্যান্থার শিকার তাড়া করেছে । ক্ষিদ্দার আপ্তবাক্যকে স্মরণ করে সে রমার সাথে ইঞ্চি ইঞ্চি করে ব্যবধান কমাতে থাকে এবং এগিয়ে যায় । নিজের সমস্ত ক্ষোভ যন্ত্রণাকে উজাড় করে দিয়ে কোনি রমার আগে বোর্ড স্পর্শ করে ও বেঙ্গল লেডিস টিমকে জাতীয় সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন করে দেয় ও হিয়াকে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সাঁতারু হওয়ার সুযোগ করে দেয় । এভাবেই কোনি সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্যের জয়মুকুট পরে নিয়েছিল ।

 

৪।  'কোনি' উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলোচনা করো ।     (মাধ্যমিক-২০১৮)

 

উত্তর:  বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক মতি নন্দী রচিত ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র নিম্নরূপ—

   (ক) জাত শিক্ষক : ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন একজন জাত শিক্ষক তাই তিনি যেকোনো প্রকারে বা মূল্যে কোনিকে স্বপ্ন পূরণের রাস্তায় তুলে দেন ।

   (খ) প্রতিভা চেতনার ক্ষমতা : তিনি একজন প্রকৃত শিক্ষক বলেই গঙ্গার ঘাটে পাওয়া মেয়েটির সুপ্ত প্রতিভাকে দেখতে পান ও তা বিকশিত করার চেষ্টা করেন ।

  (গ) স্নেহশীল : ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন স্নেহশীল শিক্ষক যিনি কোনিকে মেয়ের মতো দেখতেন ও ভালোবাসতেন ।

  (ঘ) দায়িত্ববোধ : তিনি কোনির শিক্ষক হওয়ায় কোনিকে নিজ খরচে, নিজ দায়িত্বে খাওয়াতেন, রাখতেন ও তার বাড়ির কথা জেনে লীলাবতীর দোকানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন ।

  (ঙ) গরীব দরদি : ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন একজন গরিব ও দরদি ব্যক্তি । তিনি গরীব মানুষের কাছে যেচে সাহায্যের হাত বাড়াতে দ্বিধা করতেন না ।

  (চ) সততা : ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন সৎ । তিনি জুপিটার থেকে বেরিয়ে আসার পরও জুপিটারের প্রতি তার ভালোবাসা একটুকুও কমাননি । তিনি তার জীবনে এই সততা বজায় রেখেছিলেন ।

  (ছ) তীক্ষ্ণ বুদ্ধি : ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী । তিনি কোনির মানসিক অবস্থা দেখে তাকে খাটানোর জন্য টোস্ট, রুটি ও কলার লোভ দেখান ।

  (জ) কোনি চরিত্রের পরিপূরক চরিত্র : কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশ চরিত্র ছিল কোনি চরিত্রের পরিপূরক । কোনি সারাজীবন একজন শিক্ষক ও ক্ষিতীশ একজন ছাত্রের খোঁজে জীবন অতিবাহিত করেছেন ।

 

এইভাবে সমগ্র উপন্যাস জুড়ে আশা, নিরাশার দোলাচালে দুলতে দুলতে কল্পনা বাস্তবের সম্মুখ সমরে পড়ে উক্ত চরিত্রটি জীবনের বিচিত্র সাধ লাভ করে । 

 

৫। "অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল ।" — কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল তা সংক্ষেপে লেখো ।  (মাধ্যমিক-২০১৮)

 

  উত্তর: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে বাস্তবে কোনির সাঁতার কাটা সুরু গঙ্গায় । সেখান থেকে বাংলা দলে জায়গা করে নেওয়া নেহাত সোজা ছিল না । দারিদ্রতা ও অশিক্ষার কারণে তাকে তথাকথিত শিক্ষিত ও সভ্য সমাজের কাছে হেনস্থা হতে হয়েছে ।

 

কোনির নাম প্রথম বাংলা দলে তুলে ধরেন প্রণবেন্দু বিশ্বাস । তিনি কোনির প্রতিবন্ধী হিয়ার প্রশিক্ষক হওয়া সত্বেও বলেন "কনকচাঁপা পালকে বাংলা দলে রাখতে হবে ।" মাদ্রাজের   নির্বাচনী সভায় তাই কোনির কথা বলেন । কিন্তু জুপিটারের ক্ষিতীশ বিরোধিতার জন্য তারা কোনিকে দলে রাখতে অসম্মত হয় । এর আগে কম্পিটিশনে কোনিকে ডিসকোয়ালিফাই করা ও প্রথম হওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় বলে ঘোষণা করেন । হরিচরণ, ধীরেন ঘোষ গোপন শলাপরামর্শে এসব করা হয় । তবে প্রণবেন্দু বাবু বুঝতে পারেন মহারাষ্ট্রের রমা যোশিকে হারানোর ক্ষমতা কারও থাকলে তা কোনির । তিনি এটাও বলেন যে কোনিকে বাদ দিলে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবকে বাদ দিয়ে বাংলা সাঁতার দল গঠিত হবে । তখন ধীরেন ঘোষ ভাবে একটা মেয়ের জন্য এত সমস্যা হলে তাকে নেওয়াই ভালো ।

 

এইভাবে নানাবিধ বাগবিতণ্ডার মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ সামলে প্রণবেন্দুবাবুর সুবিচারের মাধ্যমে কোনি বঙ্গবাসীর নয়ণের মনি হওয়ার সুযোগ পায় ।

 

৬। "আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়োলোক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না ।" — বক্তা কাকে, কেন এ কথা বলেছিলেন ?     (মাধ্যমিক-২০১৯)

উত্তর: মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণ ধরকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছিলেন ।

 

   🔵 'কোনি' উপন্যাসে গঙ্গার তীরে বিষ্টুচরণ ধর শরীর ম্যাসেজ করাচ্ছিলেন । সেই সময় স্নান করার জন্য ক্ষিতীশ সিংহ গঙ্গার ঘাটে উপস্থিত ছিলেন । বিষ্টুচরণ ধরের বিশাল বপু ম্যাসেজের তালে তালে ওঠানামা করছিল । ক্ষিতীশ সিংহ এই দৃশ্য অবলোকন করে হাসি চেপে রাখতে পারেন না । বিষ্টুচরণ ধর অপমানিত বোধ করেন এবং নিজের অর্থ ও প্রভাবের কথা ঘোষণা করেন । বিষ্টুচরণ ধর তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেন । আবার একইসঙ্গে ক্ষিতীশ সিংহের শারীরিক দক্ষতা দেখে অবাক হন । বিষ্টুচরণ ধর টাকার গর্বে অন্ধ ছিলেন । কিন্তু টাকা থাকলেই শরীরকে বশে রাখা যায় না । সেই প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ সিংহ উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেন ।

 

 ৭। "এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক ।" — কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে ? কী কারণে এই পুষে রাখা ?     (মাধ্যমিক-২০১৯)

 অথবা, "এরপর ক্ষিতীশ লক্ষ করল কোনি জল থেকে উঠতে দেরি করছে।" - কোন ঘটনার পর কোনির এই পরিবর্তন ঘটে ?

অথবা,  "এটাই ওকে উত্তেজিত করে বোমার মত ফাটিয়ে দেবে আসল সময়ে।"- এই ভাবনাটি কার ছিল ? কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাবনা তা আলোচনা করো।

  উত্তর: 'কোনি' উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিন ঘন্টা ঘোরার পর দুজনে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার খেতে বসেছিল । কিন্তু তাদের সঙ্গে খাবার জল ছিল না । এমত অবস্থায় কোনি তাদের পাশে খেতে বসা ছাত্রীদলের কাছে জল চাইতে যায়, কিন্তু একজন দিদিমণি তাকে ফিরিয়ে দেয় । পরে ওই দলের হিয়া মিত্র নামের একটি মেয়ে কোনিকে জল দিতে আসলে কোনি আগের অপমানের জবাব হিসেবে ওই জলের গ্লাস ফেলে দেয় । হিয়ার প্রতি কোনির যে আক্রোশ প্রকাশ পেল জলের গ্লাস ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাগটাই মনের মধ্যে পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে ।

 

        🔵 কোনি হিয়া মিত্রকে চিনত না, কিন্তু ক্ষিতীশ সিংহ এই হিয়া মিত্রকে চিনত । শুধু চিনতই না, সে জানত কোনির থেকে হিয়া মিত্র সাঁতারে অনেক ভালো অবস্থানে আছে । রবীন্দ্র সরোবরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় হিয়ার সাঁতার ক্ষিতীশ সিংহ দেখেছে । বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবে গিয়েও সে হিয়ার ট্রেনিং দেখে এসেছে । তাই ক্ষিতীশ সিংহ মনে করেছিল হিয়াই কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বি । এই অপমানের যন্ত্রণাই কোনিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে । তাই হিয়া মিত্রকে হারিয়ে অপমানের প্রতিশোধ নেবার বাসনা জাগিয়ে রাখবার জন্যই ক্ষিতীশ সিংহ এই অপমানটাকে পুষে রাখতে বলেছিল ।

 

৮। 'কোনি' উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যোগ্য সহধর্মিনী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও ।     (মাধ্যমিক-২০১৯)

 

উত্তর: মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসটি মূলত কোনি এবং তাঁর প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে । পার্শ্বচরিত্র হিসেবে অনেকেই এসেছেন । তাঁদের মধ্যে ক্ষিতীশ সিংহের স্ত্রী লীলাবতী অন্যতম ।

 

 পরিশ্রমী ও কর্মপটু : ছোটখাটো চেহারার, গৌরবর্ণা এবং গম্ভীর স্বভাবের লীলাবতী যথেষ্ট পরিশ্রমী । তাঁর সাংসারিক জ্ঞান ও সমস্ত কিছু দেখভাল করার জন্যই ক্ষিতীশ সিংহের সংসার টিকে ছিল । লীলাবতীর কর্মতৎপরতাতেই তাঁদের সংসার চলত । 'সিনহা টেলারিং' যখন লোকসানের মুখে সেই সময় লীলাবতী নিজের গয়না বন্ধক রেখে নতুন ধরনের কাজ শুরু করেন । এসময় তিনি দোকানের নাম পালটে 'প্রজাপতি' রেখে অসম্ভব পরিশ্রম ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে চার বছরের মধ্যেই 'প্রজাপতি'র শ্রীবৃদ্ধি ঘটান ।

 

 ব্যবসায়ী মানসিকতাসম্পন্ন : ব্যবসায়িক মনের পরিচয় দিয়ে তিনি পুরুষদের পোশাক তৈরি বন্ধ করে দুজন মহিলা কর্মচারীকে দোকানে রেখে শুধু মেয়ে ও শিশুদের পোশাক তৈরি শুরু করেন । তাঁর নেতৃত্বেই ব্যবসা ক্রমশ বড়ো হয়ে ওঠে এবং আরও বড়ো স্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে । সেক্ষেত্রেও তিনি নিজেই হাতিবাগানের মতো এলাকায় পাঁচ হাজার টাকার সেলামিতে একটি ভাড়ার দোকানের ব্যবস্থা করেন ।

 

 যোগ্য সহধর্মিনী : গম্ভীর স্বভাবের হলেও লীলাবতী স্বামীর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল এবং পতিপ্রাণা ছিলেন । স্বামীর স্বভাব এবং সাঁতারপ্রীতির কথা জানতেন বলেই সাংসারিক ও ব্যবসায়ীক সমস্তরকম দেখভাল নিজেই করতেন । স্বামীর আদর্শ বা ভাবনা মেনে নিয়েই তাঁরই ইচ্ছামতো খাওয়ার পদ্ধতিও প্রায় মেনে নিয়েছিলেন । স্বামীর পরিশ্রমী সত্তার প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অটুট ছিল বলেই তিনি কোনির সাঁতার দেখতে হাজির হয়েছিলেন । স্বল্প পরিসরেও তাঁর কর্মপ্রাণা, সংসারী এবং পরোক্ষে স্বামী অনুরাগী চরিত্রটি উপন্যাসে ধরা পড়েছে ।


৯। কোনি উপন্যাস অবলম্বনে কোনির চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো ।

উত্তর: বাংলা কথা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মতি নন্দী প্রণীত 'কোনি' উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলো কোনি। ক্ষিতীশের অভিভাবকত্বে সকল বাধা জয় করে জীবনের জয়স্তম্ভে পদার্পণই 'কোনি' উপন্যাসের মূল উপজীব্য। কোনির চরিত্র বিশ্লেষণ করলে যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ-

কঠোর জীবন সংগ্রাম:

কোনি ওরফে কনকচাঁপা পাল অতি দারিদ্র্যপীড়িত সংসারের মেয়ে। চেহারা ছেলেদের মতো,মেয়েমদ্দানি। কোনো কিছুতেই ভয়ে পিছুপা হয়না । কঠোর সংগ্রামের ফলেই সে শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করে। 

 চারিত্রিক দৃঢ়তা :

কোনি দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী । গঙ্গায় আম কুড়ানো নিয়ে ঝগড়াই হোক বা হিয়া মিত্রের হাতে আঘাত করে জল ফেলে দেওয়া সব কিছুর মধ্যেই তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশিত।

 পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা :

পরিবারের অন্নসংস্থানের জন্য কোনি ট্রেনিং- এর পরই  ছুটে যায় প্রজাপতিতে কাজ করার জন্য। ক্ষিতীশ তার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করলে সে খাদ্যের বদলে একটা টাকা চেয়ে নেই চাল কেনার জন্য ।

প্রখর আত্মসম্মানবোধ :

কোনির আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রখর।  মাদ্রাজে জাতীয় স্তরে খেলতে গিয়ে হিয়ার জন্য যখন চোর বদনাম পেয়ে চড় খায় তখন হিয়াকেও সে চড় না ফিরিয়ে দিয়ে ছাড়ে না। চিড়িয়াখানার ঘটনাতেও তার আত্মসম্মানবোধ প্রকাশ পেয়েছে।

 পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু :

কোনি ছিল অসম্ভব পরিশ্রমী । পারিবারিক দারিদ্র্য, নিজের ক্ষুধাকে হারিয়েও সে নিজেকে পরিশ্রমে যুক্ত রাখে। কঠোর পরিশ্রমের ফলেই কোনি জয়মাল্য ছিনিয়ে নেয়।

 প্রতিবাদী :

অপমান অবহেলা সমস্ত কিছুর প্রতিবাদ সে করেছে তার সাঁতারের মাধ্যমে।

 কোনির নিষ্ঠা ,একাগ্রতা ,লড়াকু পরিশ্রমী মানসিকতা চরিত্রটিকে আমার চোখে বিজয়িনী নায়িকাতে পরিণত করেছে।




১৩। "আজ বারুণী।"-বারুণী কী? বারুণী তিথিতে গঙ্গার ঘাটের দৃশ্য কোনি উপন্যাসে কীভাবে ফুটে উঠেছে?


উত্তর: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক ও ক্রীড়াসাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসের শুরুতেই আমরা বারুণীর কথা পাই। 

 শতভিষা নক্ষত্রযুক্ত কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে পুণ্যস্নান দ্বারা পালনীয় পর্ব হল বারুণী ।

কোনি উপন্যাসের শুরুতেই আমরা গঙ্গার ঘাটের এক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি। লেখক বলেন- "গঙ্গায় আজ কাঁচা আমের ছড়াছড়ি ।" হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব বারুণী উপলক্ষে দেবতার উদ্দেশ্যে কাঁচা আম উৎসর্গ করা হয়। এদিন গঙ্গার ঘাটে  পুণ্যার্থীরা জলে ডুব দিয়ে কাঁচা আম উৎসর্গ করেন। আর  ছেলেমেয়েদের দল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেই আম সংগ্রহ করে । সেই সংগ্রহ করা কাঁচা আম বাজারে কম দামে বিক্রি করে। একইসঙ্গে ঘাটে মেলা বসে ও নানা রকম জিনিস বিক্রি হয়। তাই পুণ্যার্থীদের সমাবেশে কাঁচা আম কুড়ানোর আশায় ছেলেমেয়েদের ও দোকানদারদের সার্বিক উপস্থিতিতে গঙ্গার ঘাটে থইথই ভিড়।

গঙ্গার ঘাটে বয়স্করাই বেশি। কেউ কেউ সদ্য ওঠা কাঁচা আম  মাথায় করে ডুব দিয়ে ফেলে দেয়।স্রোতের টানে তা ভেসে যায়। অনেকে আবার গলাজলে দাঁড়িয়ে আম দূরে ছুঁড়ে মারে। জলে অপেক্ষা করে থাকা ছেলেমেয়েরা সে আম কুড়ানোর জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করে জল তোলপাড় করে এগিয়ে আসে। বারুণী উপলক্ষে ভিখারিদের  উপস্থিতি ভিড়টাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। পথের ধারে দোকান বসে প্লাস্টিকের , কাঠের, খেলনার। বিক্রি হয় ওল,থোড়,কমলালেবু ইত্যাদি। এভাবে নানা ধরনের লোকের সমাগমে ভিড় জমে যায়।গঙ্গার ঘাটে এই দৃশ্যই 'কোনি' উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদের প্রথমাংশে ফুটে উঠেছে।



১৪। "তোর আসল লজ্জা জলে আসল গর্বও জলে।"- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।


উত্তর: বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও উপন্যাসিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসের দশম পরিচ্ছেদ থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে । কোনি ৪০ টাকার বিনিময়ে লীলাবতীর টেলারিং শপ 'প্রজাপতি'তে ঝাঁট দেয় ও ফাইফরমাশ খাটে। একদিন অমিয়া ওই দোকানে ব্লাউজ তৈরি করাতে এসেছিল।কোনিকে সেখানে দেখে অমিয়া বলেছিল- "তুই এখানে ঝিয়ের কাজ করিস।" এই কথায় কোনি  খুব লজ্জা পেয়েছিল । ক্ষিতীশ তাকে সান্তনা দিতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।


 কোনি সম্ভাবনাময় সাঁতারু। তার সম্পর্ক জলের সঙ্গে। যার যেখানে অবস্থান তার লজ্জা এবং সম্মান সেখানেই। একজন ক্রিকেটার বা ফুটবলারের সম্মান, লজ্জা, গর্ব খেলার মাঠেই। দোকানে ঝিয়ের কাজ করে বলে কোনিকে তাচ্ছিল্য করেছিল অমিয়া ।কিন্তু সেটা তার প্রকৃত কর্মক্ষেত্র নয় । সেখানে তার সাফল্য , ব্যর্থতা বা গর্বের কোন স্থান নেই। কেননা কোনি প্রতিভাবান সাঁতারু। যেহেতু সাঁতারের সঙ্গে জলের সম্পর্ক নির্দিষ্ট তাই কোনির সাফল্য-ব্যর্থতা জলেই সীমাবদ্ধ। সাঁতারে ব্যর্থ হলে তার লজ্জিত হওয়া উচিত, আবার সাফল্য লাভ করলে গর্ব। কোনির মনে প্রেরণার সঞ্চার করতে কোনির মনে প্রাণ সঞ্চার করতে ক্ষিতীশ বলেছে অমিয়ার কথায় লজ্জিত না হয়ে সাঁতারটা  মন দিয়ে করতে। জলের বাইরে কোনির কোনো লজ্জা বা গর্বের কোনো কিছু নেই।


কোনি সিনেমা:

১৯৮৬ সালে সরোজ দে পরিচালিত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত একটি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র।

উপন্যাসটি পড়ার পর তোমরা অবশ্যই সিনেমাটি দেখবে। সিনেমাটির লিংক নিচে দিলাম...

কোনি সিনেমা দেখতে এখানে টাচ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ